জানুন মাসিকের সময় কি করবেন ও কি করবেন না।

0 Shares
0
0
0

মাসিক এটা নারীদের একটি স্বাভাবিক বিষয়। প্রত্যেক নারী প্রতিমাসে যোনিপথ দিয়ে যে রক্তস্রাব হয় তাকে ঋতুস্রাব বা মাসিক বলে। নারীদের মাসিক সাধারণত ১০ -১৪ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয় এবং ৪৫ -৫০ বছর পর্যন্ত বয়সে প্রতিমাসে একবার করে হতে থাকে এবং প্রতিমাসে ৩-৭ দিন পর্যন্ত মাসিক হয়ে থাকে ।বয়ঃসন্ধিকালে মাসিক খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। সেজন্য এটি নিয়ে বেশি ভয় পাওয়ার কিছু নেই।মাসিকের সর্ম্পকে সকলের সম্পূর্ণ ধারণা না থাকার কারণে আমরা নারীরা বিভিন্ন ধরনের রোগ এর মুখ-মুখি হয়ে থাকি।মাসিক এর সময় আমরা অনেকেই পুরোন কাপড় ব্যবহার করে থাকি । তবে পুরোন কাপড় ব্যবহার করা ঠিক নয় কারণ এতে করে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার জনিত রোগ হতে পারে। মাসিক এর সময় পরিষ্কার থাকা খুব জরুরি।

মাসিকের সময় পরিষ্কার না থাকলে কি কি হতে পারে?

 মাসিক বা পিরিয়ড এর সময় শরীরের যত্ন না নিলে আমাদের কিছু বিষয়ে সম্মুখীন হতে হয়।যেমন-

  •   ইউ.টি আই (U.T. I) ইউরিনারি ট্রাক ইনফেকশন বা যোনিপথে জীবাণু সংক্রমন।
  • HPV) হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস।
  • গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।
  • সারভিক্যাল ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধি ও হতে পারে।

মাসিকের সময় যে ১০ টি বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভাবে মেনে চলা জরুরিঃ

১। পিরিয়ড বা মাসিকের সময় অনেকে কাপড় ব্যবহার করে। কিন্তু কাপড় ব্যবহার করা ঠিক নয়। এইসময় উচ্চশোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা উচিত। তবে আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে পরিষ্কার কোনো কাপড় জীবাণু নাশক দিয়ে ধুয়ে তা ব্যবহার করা যেতে পারে।এছাড়াও, সকলের রক্ত প্রবাহ সমান হয় না। কারও কম কারও বা বেশি। সেই বুঝে স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন করতে হবে। একটি প্যাড ৪ ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা ভালো নয়, এতে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে।

২। শরীরের সকল অঙ্গের মতোই যোনি পথে স্বাভাবিক জীবাণু বাস করে, কিন্তু রক্ত যখন দেহের বাইরে নির্গত হয়ে যায়,তখন তা জীবাণু বেড়ে ওঠার পক্ষে অনুকূল হয়, তাই একটি প্যাড দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা ভালো নয় ।

৩। প্যাড বদলে নতুন প্যাড নেওয়ার আগে হাত ও সেই স্থান পরিষ্কার করে ধুয়ে ও মুছে নিতে হবে। তা না হলে প্যাডে লেগে থাকা জীবাণু নতুন প্যাডে সংস্পর্শে সংক্রমন ঘটাতে পারে এবং সেখান থেকে জীবাণু জরায়ুতে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য প্রয়োজনে জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে।

৪। টয়লেটে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখা যাবে না, কারণ টয়লেটে থাকা নানারকম জীবাণু প্যাডের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে । জীবাণুযুক্ত প্যাড ব্যবহার করলে তার থেকে মারাত্বক স্বাস্থ্য হানি ঘটতে পারে।

৫। যোনিপথের বাইরের অংশে ও চামড়ার ভাজে রক্ত ও জীবাণু থাকতে পারে। তাই দিনে কয়েকবার গরম জল দিয়ে সেই স্থান পরিষ্কার করতে হবে। এতে পরিছন্ন থাকার পাশাপাশি মাসিক চলাকালীন ক্লান্তি, পিঠ হাত-পা ব্যথা কম অনুভূতি হবে।

৬। মাসিক চলকালীন প্রতিদিন সাবান, শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করতে হবে। তবে, যোনিপথ বা তার আসে পাশে সাবান ব্যবহার করা যাবেনা। এমনকি ডেটল,বা সেভলন ব্যবহার করাও অনুচিত হবে। যোনিপথ পরিষ্কারের জন্য সঠিক pH ব্যালেন্স যুক্ত লিকুইড ব্যবহার করতে হবে।

৭। স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন বা ব্যবহারের আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাতে ধুয়ে ও মুছে নিতে হবে।

৮। ব্যবহার করা স্যানিটারি প্যাড কাগজে মুড়ে ডাস্ট বিনে ফেলতে হবে,যাতে তার থেকে অন্য কারো জীবাণু না ছড়ায়।

৯। এইসময় পাবলিক বাথরুম ব্যবহার না করাই ভাল। তবে, একান্ত প্রয়োজন হলে পাবলিক বাথরুম ব্যবহারের আগে বাথরুমের সেই জায়গা টিকে ভালো করে ধুয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে । প্রয়োজনে সাথে ছোট বোতলে ডেটল বা সেভলন রাখতে হবে। জলের সাথে অল্প করে ডেটল বা সেভনল মিশিয়ে জায়গাটিকে ধুয়ে তারপর মূত্র ত্যাগ করতে হবে।

১০। প্রতিদিন অন্তর্বাস গরম জলে ডেটল দিয়ে ধুতে হবে।

মাসিকের সময়ে নারীদের যে সকল সমস্যা দেখা যায়ঃ

তলপেটের অতিরিক্ত ব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্ত বোধ করা, মাথা ঘুরানো, এসিডিটি, মুখের অরুচি, বমি বমি ভাব, অসস্তিবোধ ইত্যাদি ধরনের লক্ষণ দেখা যায়।অনেকের আবার নিয়মিত পিরিয়ড হয় না। অনিয়মিত পিরিয়ড বা একেবারেই পিরিয়ড বন্ধ হওয়া পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (POS) এর জন্য হয়ে থাকে।তবে আরও অনেক কারণ আছে যার জন্য পিরিয়ড নিয়মিত হয় না। যেমন- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা, ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গ্রহণ যেমন অতিরিক্ত কফি পান করা, স্ট্রেস নেওয়া, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করা, অপরিচ্ছন্ন থাকা, মদ্যপান বা ধূমপান করা ইত্যাদি।পিরিয়ডের সময় এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যা গ্রহণে শরীর সম্পূর্ণভাবে সুস্থ ও সতেজ থাকবে। নিয়মিত পিরিয়ড হলে শরীরের হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক থাকে।

যে১০ টি খাবার মেন্সট্রুয়েশন সাইকেলের জন্য উপযোগী তা হল-

১.ডার্ক চকলেটঃ ডার্ক চকলেট শরীরের নার্ভ সিস্টেমকে সতেজ ও ঠাণ্ডা করে এবং মেজাজ ঠাণ্ডা করে তাই এটি পিরিয়ডের সময় খাওয়া ভালো।

২.গ্রিন-টিঃ গ্রিন টি এক প্রকারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি পিরিয়ডের ব্যথাও কমায়।

৩.লেবুঃ লেবুতে ভিটামিন সি আছে। লেবুর শরবত বা তরকারিতে লেবু দিয়ে খাবার পিরিয়ডের সময় খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভালো।

৪.কলাঃ কলাতে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি আছে, যা খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে এনার্জি আসে। শরীরের রক্তক্ষরণের জন্য শরীর কয়েকদিন দুর্বল থাকে। তাই এই সময়ে কলা একটি ভালো পুষ্টিকর খাবার৷

৫.আদা ও দারুচিনি চাঃ দুধ চায়ের বদলে আদা ও দারুচিনি দিয়ে চা খেলে পিরিয়ড নিয়মিত হয়।

৬.আনারসঃ অনিয়মিত পিরিয়ড হলে আনারস খেলে আশা করি পিরিয়ড নিয়মিত হবে।

৭.চিটাগুড়ঃ চিটাগুড় লাল চা বা মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে পিরিয়ড নিয়মিত হবে এবং দেহে লৌহ ও জিংকের পরিমাণ পরিমিত থাকে।

৮.কাচা পেঁপেঃ কাচা পেপে নিয়মিত পিরিয়ড হওয়াতে সাহায্য করে এবং পিরিয়ডের ফ্লো ভালো হয়।পেঁপের শরবত পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর সঙ্গে ফ্লো ক্লিয়ার হওয়াতে সাহায্য করে।

৯.হলুদ গুঁড়াঃ পিরিয়ডের সময় হলুদ খাওয়া ভাল। এটি পাতলা দুধের সঙ্গে পান করতে হয়।

১০.ধনেপাতাঃ ধনেপাতা বা পার্সলিপাতা ভর্তা অনিয়মিত পিরিয়ডকে নিয়মিত হওয়াতে সাহায্য করে।

অন্যান্য খাবারের মধ্যে বাদাম, কাঠবাদাম, রঙিন ও সবুজ শাক-সবজি, আনার, অ্যালোভেরা, গাজর ইত্যাদি খাবার পিরিয়ডের সময় গুরুত্বপূর্ণ।পিরিয়ডের সময় এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো এড়িয়ে চলতে হয়। যেমন- কফি বা দুধ চা এড়িয়ে চলতে হবে, অতিরিক্ত ভারী খাবার ও তেলে ভাজাপোড়া খাবার, প্রসেসড খাবার, কোল্ড ড্রিংকস ও অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত ঘন দুধ জাতীয় খাবার।

এভাবে খাবারের দিকটি নিয়ম মেনে চললে এবং উপরের বিষয় গুলো মেনে চললে মেন্সট্রুয়েশন সাইকেল নিয়মিত হবে এবং এই সময়ে শরীর এনার্জিটিক ও শরীর সুস্থ্য থাকবে।

লেখক : খাদিজা আক্তার লাবনী। S.S.C পরীক্ষার্থী।বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ সাভার , ঢাকা।

0 Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You May Also Like
what happens to us when we sleep

মানুষের শরীরে ঘুমের ৪টি পর্যায় ।

রাতে এই পৃথিবী প্রায় প্রত্যেকেই মানুষই অজ্ঞান এবং পক্ষাঘাতের অবস্থায় প্রবেশ করে যেটিকে ঘুম বলা হয় – কিন্তু,আমরা…
Read More

সানস্ক্রিন এর ব্যবহার ও ত্বকের জন্য কেন প্রয়োজন ?

সূর্যের ক্ষতিকারক আলট্রাভায়োলেট রশ্মি আমাদের ত্বককে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। এই আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে নিজের ত্বককে সুরক্ষা দিতে…
Read More
benefits-of-sandalwood-in-skin-care-and-its-multiple-uses

ত্বকে চন্দনের উপকারকিতা ও এর বহুবিধ ব্যবহার।

প্রাচীন সময় থেকেই চন্দন ত্বকের যত্নে ব্যবহার হয়ে এসেছে। যেমন, হলুদের ব্যবহার হয়েছে। ঠিক তেমনই চন্দনের ব্যবহার হতো।…
Read More
how-can-we-overcome-lifes-worries

আমরা  আমাদের  জীবনের দুশ্চিন্তা গুলি আমরা কীভাবে জয় করতে পারি ।

এই পৃথীবিতে এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না , যার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা মানুষের…
Read More
5 ways to increase skin radiance.

৫ টি উপায়ে ত্বকের উজ্জ্বল বৃদ্ধি করার উপায়।

বাড়ি থেকে কাজ করার এবং মুখোশ পরার এক বছরেরও বেশি সময় পরে, আমরা আমাদের মেকআপ ব্যাগগুলিকে কিছুটা ঠান্ডা…
Read More