ভোটার আইডি কার্ড করবেন অথবা সিমের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন করবেন, চাই আপনার আঙুলের ছাপ। কিন্তু মেশিন ঠিক থাকার পরেও নিচ্ছে না আপনার আঙুলের ছাপ। এদিকে লাইনের বাকি মানুষ আপনার উপর ভীষণ বিরক্ত। কিংবা পরীক্ষার হলে পুরা খাতা ভিজে যাচ্ছে, কলম পিছলে যাচ্ছে লিখতেই পারছেন না। এটা কি শুধুই নার্ভাস হয়ে যাওয়ার জন্য? এমন নানা বিপত্তিকর অবস্থায় পরতে হয় অদ্ভূত এক রোগের ব্যক্তিদেরকে যার নাম হাইপারহাইড্রোসিস বা হাত-পায়ের তালু ভেজা রোগ।
হাইপারহাইড্রোসিস কী?
সাধারণত আমাদের হাতের তালু এবং পায়ের পাতায় কোন ঘর্মগ্রন্থি থাকেনা। তাই শরীরের বাকী অংশ ঘামালেও হাত পা শুকনো থাকে। এই ব্যতিক্রমটাই হয় হাইপারহাইড্রোসিসের রোগীর। তারা জন্মগতভাবে হাতের তালু ও পায়ের পাতায় ঘামের গ্রন্থি নিয়ে জন্ম নেয়। ফলাফল দিনের বেশীর ভাগ সময় ঐ দুই জায়গা ভেজা থাকা। যেটা প্রকট আকার ধারণ করে যে কোন স্ট্রেসের সময়। তবে ব্যক্তিবিশেষে গ্রন্থিসংখ্যার ওপর এই পানি ঝরার পরিমাণ কম বেশী হয়।
জটিলতা
সেই ছোটবেলা থেকে এই ভুক্তভোগীদেরকে হাতে এক্সট্রা কাগজ, রুমাল, একটু বড়বেলায় টিস্যু পেপার, গায়ের ওড়না সারাক্ষণ কাজে লাগাতে হতো সেই হাত মোছায়। ভালো কোন ব্রান্ডের জুতা পরা তো দূরে থাক জুতা কিনতে বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখতে হয় সবসময়, যেন হাঁটতে গেলে পা স্লিপ না করে। কি যে এক বিশ্রী অবস্থা তা শুধু যারা এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যায় তারাই ভালো জানে।
চিকিৎসা
এমন বিব্রতকর অবস্থা থেকে সাময়িক পরিত্রাণের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসা থাকলেও এর একমাত্র স্থায়ী ওষুধ হলো সার্জারি। উন্নত দেশগুলোতে এই অপারেশন করা হয় যার নাম হচ্ছে ল্যাপারোস্কোপিক সারভাইক্যাল সিমপ্যাথেকটমি। অর্থাৎ যেই নার্ভ আমাদের হাতের তালুতে থাকা ঘামের গ্রন্থি থেকে নিঃসরন ঘটায় সেই নার্ভটার সংযোগ নষ্ট করে দেয়া।
আমাদের দেশে অনেকেই এই রোগের চিকিৎসার জন্য চর্মরোগের ডাক্তার দেখান বা কিছু মেডিসিন গ্রহণ করে যা কেবলই সাময়িক সময়ের জন্য হাতের ঘামানো কমাতে পারে। আবার বোটক্স নামের এক ইঞ্জেকশন দিয়েও এর চিকিৎসা হয় ,তবে সেটিও স্থায়ী নয়। ১৯৬০ এর দশকে আয়নটোফোরেসিস (Iontophoresis) নামের এক পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয় হাইপারহাইড্রোসিসের চিকিৎসায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স এবং টেকনোলজী বিভাগের বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে এক ডিভাইস ডিজাইন করে যা অ্যান্টি-সোয়েট (ANTI-SWEAT) নামে পরিচিত। ঘরে বসেই এই যন্ত্রের মাধ্যমে অনেক রোগী হাত পা এর তালু ঘামার নিরাময় করছেন।
আমাদের দেশে এই রোগের রোগীর সংখ্যা নেহাত কমও নয়। কিন্তু যাদের সমস্যা গুরুতর নয় তারা চিকিৎসার ব্যাপারটি জোর দিয়ে আমলে নেন না। তবে গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেয়াটা খুবই জরুরি।
আপনি যদি হাইপারহাইড্রোসিসের রোগী হোন তবে আপনার বিব্রতকর পরিস্থিতি শেয়ার করতে পারেন আমাদের কমেন্ট বক্সে।
লেখকঃ ডাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস, (MBBS, DCH (Sydney), FRACGP
সম্পাদকঃ উম্মে সুরাইয়া
Source: