জীবের ব্লুপ্রিন্ট বা নীল নকশা নামে পরিচিত ডিএনএ অণু। খুব ক্ষুদ্র হলেও এর বিশালত্ব অনেক। ডিএনএ থেকে তৈরি হয় আরএনএ আর আরএনএ থেকে তৈরি হয় প্রোটিন যা জীবের সকল কাজ সম্পাদন করে। জীবের এই প্রোটিন তৈরির সকল নির্দেশনা লিখিত থাকে এই অণুতে। কিন্তু আমরা কতোটুকু জানি ডিএনএ সম্পর্কে? চলুন আজ ডিএনএ এর সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কর তথ্য জানি যা থাকতে পারে আপনার কাছে অজানা।
ডিএনএ এর দৈর্ঘ্য
২০০০০ গিগামিটার!! আপনার দেহে আপনি প্রায় ২০০০০ গিগামিটার দৈর্ঘ্যের ডিএনএ বহন করছেন। কোষে ডাবল হেলিক্স ডিএনএ পেঁচানো (Supercoiled) অবস্থায় থাকে। প্রতিটি ডিপ্লয়েড কোষে ডিএনএর দৈর্ঘ্য প্রায় ২ মিটার। যদি কোনো প্রাপ্তবয়স্কের দেহে ১০^৩ ( 1013 ) টি কোষ থাকে তবে তার দেহে মোট ডিএনএ এর দৈর্ঘ্য হবে ২*১০^৩ ( 2×1013 ) মিটার বা ২০০০০ গিগামিটার। জেনে অবাক হবেন যে পৃথিবী থেকে সূর্য তে আসা যাওয়াসহ প্রায় ৭০ টি ট্রিপে এই একই দৈর্ঘ্য অতিক্রম করতে হয়।
ডাটা স্টোরেজ
বিশ্বে প্রতিদিন ৪৬৩ এক্সাবাইট (১ এক্সাবাইট=১ মিলিয়ন টেরাবাইট) ডাটা তৈরি হয়। আর এত এত ডাটা সংরক্ষণে দরকার বিশাল বিশাল সুপার কম্পিউটার। দিন যত বাড়বে ডাটার পরিমাণও তত বাড়বে, তৈরি হবে সংরক্ষণ করার জটিলতা। আর এই জটিলতা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে ডিএনএ। জীবদেহের সকল নির্দেশনা কোড করা থাকে জেনেটিক লেটারের মধ্যে (A, T, G, C) । বাইনারি (0,1) কোড কে ডিএনএ কোডে রূপান্তর করার মাধ্যমে খুব অল্প জায়াগায় অধিক পরিমাণে ডাটা সংরক্ষণ করা যায়। ডিএনএ এর ডাটা ধারণ ক্ষমতা এতই বেশি যে ধারণা করা হয় এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সকল তথ্য ডিএনএ ডাটা হিসেবে রাখলে একটি জুতার বাক্সের সমান জায়গার দরকার হবে।
একই দেহে দুই বা ততোধিক ভিন্ন ধরণের ডিএনএ
মানুষের ক্ষেত্রে সাধারনত একই ধরণের ডিএনএ প্রোফাইল থাকে। তবে কখনও কখনও একই ব্যক্তির দেহে দুই বা তার অধিক ভিন্ন ধরণের ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যেতে পারে। এই অবস্থাকে ‘কাইমেরা’ বলে। Bone marrow transplantation, stem cell transplantation, organ transplantation, fusion of two embryo এইসব ক্ষেত্রে কাইমেরা অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। এমন ব্যক্তির ডিএনএ এর নমুনা ফরেন্সিক কাজে ভুল তথ্য দিতে পারে।
ডিএনএ এর ৩% জিন
ডিএনএ এর যে অংশে প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা থাকে তাকে জিন বলে। আর সম্পূর্ণ ডিএনএ এর ১-৩% হলো জিন। ডিএনএ এর বাকী অংশ এই জিনের কার্যকারীতা নিয়ন্ত্রণ করে।
দিনে ১০০ বারের বেশি নষ্ট হয় ডিএনএ
মানুষের কোষে দিনে ১০০ বারের বেশি নষ্ট বা ক্ষতি হয় ডিএনএ। রাসায়নিক দ্রব্য বা ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি এর গঠনের পরিবর্তন করে কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, ঘটে জিনের মিউটেশন। কিন্তু দেহে থাকা রিপেয়ার মেকানিজম (Repair mechanism) মিউটেশনের হাত থেকে রক্ষা করে ডিএনএ কে। যদি কোনো কারনে এই মেকানিজম ডিএনএ কে ঠিক করতে না পারে তবে সৃষ্টি হয় ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের।
কোন তথ্যটি আপনার কাছে নতুন বা মজার জানিয়ে দিন কমেন্ট বক্সে।
Source:
- https://facts.net/nature
- 10 Fun Facts about DNA
- https://blogs.ancestry.com
- https://dodona.ugent.be
- https://www.biospace.com
লেখকঃ উম্মে সুরাইয়া