সৃষ্টির শুরু থেকেই মানবদেহ এক রহস্য। ৬০% এর বেশি পানি, বিভিন্ন ধরনের জৈব অজৈব পদার্থ, বিভিন্ন পেশি, ২০৬ টি হাড় এবং ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কোষ দিয়ে গঠিত এই সৃষ্টির অনেকটাই এখন আমরা জানি যা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমে। আবার আরো অনেক অজানাই রয়ে গেছে রহস্যের গভীরে। মানবদেহের এমনই কিছু অজানা, অমীমাংসিত তথ্য নিয়ে সাজানো আজকের লেখনী।
আঙুলের ছাপ
একবিংশের এই শতাব্দীতে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আঙুলের ছাপ আমাদের কি কাজে লাগে তবে নির্দ্বিধায় উত্তর আসবে ‘অপরাধী শনাক্তকরণে’। কিন্তু যদি জানতে চাওয়া হয় আমাদের দেহে আঙুলের ছাপের কাজ কি তবে একটু ভাবতে হবে। প্রতিটি মানুষের আঙুলের ছাপ ভিন্ন ভিন্ন হয় এমনকি অভিন্ন যমজদের ক্ষেত্রেও তা ভিন্ন। ভ্রূণ থাকা অবস্থাতেই একজন মানুষের আঙুলের ছাপ তৈরি হয়। তবে দেহে এর ভূমিকা বা অবদান নিয়ে আছে নানা্ন মত। কারো কারো ধারণা ছিলো বস্তুকে দৃঢ়ভাবে ধরার জন্য এটা ভূমিকা রাখতে পারে কিন্তু এই ধারণা একদল গবেষক নাকচ করেন। আবার কেউ কেউ দাবি করেছেন স্পর্শের সংবেদনশীলতায়,আঘাত হতে সুরক্ষায় এই ছাপের ভূমিকা থাকতে পারে। তবে নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা এখনো অজানা।
হাই তোলা
হাই তোলা এতটাই সংক্রামক যে এই শব্দটি পড়ার সাথে সাথেই যে কেউ হাই তুলবে। তবে কেনো তা সংক্রামক এবং দেহে তার কোনো প্রভাব আছে কি না তার কারণ এখনও অমীমাংসিত। দেহে অক্সিজেনের যোগান দেয়া, মস্তিষ্কের তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ, দেহের জড়তা ভেঙে কোষগুলোকে সচল করা, মুখে এবং মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে ভূমিকা- এসবই হলো হাই তোলার পিছনে থিওরি। তবে প্রথমটি ১৯৮৭ সালে এক গবেষণার মাধ্যমে নাকচ করে দেয়া হয় এবং প্রচলিত থিওরি হল মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।
- ডিএনএ সম্পর্কে মজার তথ্য – Interesting facts of DNA
- কফি সম্পর্কিত কিছু মজার তথ্য
- আপনার আর টম ক্রুজের বা জ্যাকি চ্যান এর মধ্যে মিল ৯৯.৯%!
- বংশগতির ধারক ও বাহক – Chromosome
- খাবেন আপনি হজম করবে ব্যাকটেরিয়া – Gut Bacteria
অ্যাপেন্ডিক্স
দেহের এমন এক অংশ যা না থাকলে কোনো ক্ষতি হবে না তা হলো অ্যাপেন্ডিক্স যা সবার কাছেই পরিচিত। যার কাজ এখনো অজানা। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী গাট ব্যাকটেরিয়ার বাসস্থান এবং ডায়রিয়ার প্রকোপের পর দেহের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম পুনরায় ঠিক করতে অ্যাপেন্ডিক্স ভূমিকা রাখে। আবার অনেকের মতে এই অ্যাপেন্ডিক্স হলো বিবর্তনের ফলে উদ্ভূত দেহের অব্যবহৃত অবশিষ্ট অংশ।
স্বপ্ন
‘স্বপ্ন সেটা নয় যা আপনি ঘুমিয়ে দেখেন, স্বপ্ন সেটা যা আপনাকে ঘুমাতে দেয় না।’
শ্রদ্ধেয় এ পি জে আবদুল কালামের এই উক্তিটি আমরা সবাই জানি। তবে এখন যে স্বপ্নের কথা বলবো তা ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্ন যা মানবদেহের আরেকটি রহস্য। আমরা কেন স্বপ্ন দেখি বা সেই স্বপ্ন আমাদের আদৌ কোনো উপকারে আসে কি না তার রহস্য বিজ্ঞানীরা এখনও ভেদ করতে পারে নি। সাধারণত ঘুমের ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ (REM Sleep) পর্যায়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। অবচেতন মনের চিন্তা ভাবনা, কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, সারাদিনের করা কাজ বা অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা – বেশিরভাগ সময় এগুলোই হয় স্বপ্নের বিষয়বস্তু।
দেজা ভু
কখনো কি আপনার সাথে এমন হয়েছে যে নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে গিয়ে মনে হয়েছে আপনি সেখানে এর আগেও গিয়েছেন অথবা কোনো ঘটনা যেটা সম্পূর্ণ নতুন কিন্তু আপনার মনে হচ্ছে সেটা আগেও ঘটেছে? ঘাবড়ানোর কিছু নেই,এমনটা শুধু আপনারই নয় সকলের জীবনেই ঘটে;যার নাম দেজা ভু। ‘দেজা ভু’ একটি ফরাসি শব্দ যার মানে হল ‘ইতিমধ্যে দেখেছে বা অনুভব করেছে’’। ২০০৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে ৬০% মানুষের জীবনে একবার হলেও এই দেজা ভু -এর অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেহেতু এরূপ ঘটনা যে কোনো সময় হতে পারে যার কোনো প্রমাণ বা রেকর্ড থাকে না তাই বিজ্ঞানীদের জন্য এর ব্যাখ্যা দেয়া খুবই কঠিন। আবার সবার ক্ষেত্রে এর কারণটা এক নাও হতে পারে। মস্তিষ্কে ধীরগতি, কাজের প্রতি অমনোযোগ, অতীত থেকে স্মৃতি সংগ্রহ – প্রচলিত সময়ে এদের দ্বারাই দেজা ভু কে ব্যাখ্যা করা হয়।
মানবদেহ সম্পর্কিত আর কোন ব্যাপারটি আপনার কাছে রহস্যের জানিয়ে দিন কমেন্ট বক্সে।
Sources:
- The Healthy
- Live Science
- healthline.com
- nytimes.com
- webmd.com
- verywellmind.com
- wikipedia.org
- healthline.com
লেখকঃ উম্মে সুরাইয়া