বর্তমান সময়ে মানুষের চাহিদার সর্বপ্রথমে থাকা প্রোডাক্ট হচ্ছে মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন৷ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মোবাইল ফোনের চাহিদা দিনকে দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। তথ্যপ্রযুক্তির এ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে মোবাইল ফোনের রয়েছে বেশ বড় ভুমিকা।আমাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মোবাইল ফোনের বাজারে দেখা যাচ্ছে হরেক রকমের মোবাইল ব্র্যান্ড৷ নিত্য ব্যবহার্য পণ্য হিসেবে আমাদের জানা দরকার বিশ্বের সেরা মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডগুলো৷ কেননা বর্তমান বিশ্বে ছোট বড় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মোবাইলফোন নির্মাণ করে আসছে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যাতীত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ফোনের মান আপ টু দ্য মার্ক নয়।তবে চরম প্রতিযোগীতার এ বাজারে বেশ কতগুলো প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের উৎপাদন, গুণগত মান, ব্র্যান্ডিং, ব্যবসায় নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করছে।
চলুন জেনেনি বিশ্ববাজার দখল করা বিশ্ব সেরা ১০ টি মোবাইল কোম্পানি সম্পর্কে
1. নকিয়া (NOKIA):
আমদের নিকট একসময়ের সবচেয়ে পরিচিত ব্র্যান্ড নকিয়া৷ ২০০০ সালের দিকে মোবাইল বলতেই আমরা নকিয়াই বুঝতাম। নকিয়ার ১১০০, ১২০০ মডেলের ফোনগুলো জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিল। নকিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। নকিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হলেন ফেড্রিখ আইস্টাইম ও লইও মেকলিন। নকিয়ার মোট সম্পত্তির পরিমান ৪১.০২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
2. স্যামসাং (Samsung)
ব্যান্ড হিসেবে স্যামসাংয়ের নাম শুনেনি, এরকম মানুষ খুজেঁ পাওয়া দুষ্কর৷ দক্ষিণ কোরিয়ার এ প্রতিষ্টান তাদের অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের মত মোবাইল ফোনেও সর্বোচ্চ প্রযুক্তির মিশেলে অসাধারণ স্মার্টফোন তৈরিকারী হিসেবে বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছে৷ বিশ্ববাজারে এদের প্রভাব এতটাই যে, বলা হয়ে থাকে বিশ্বের প্রায় ৭০% ফোনই কোনো না কোনোভাবে এই স্যামসাংয়ের আওতাভুক্ত।বিশ্বের সেরা এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৩৮ সালে মাত্র ৪০ জন কর্মী নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু করে। ২০০৯ সাল থেকে প্রফেশনালি স্মার্টফোন নিয়ে কাজ করে খুবই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের সেরা মোবাইল ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমান বিশ্বের মোবাইলফোন বাজারের ২১.৩ শতাংশ দখল করে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিটির।এ সময়ে এদের গ্যালাক্সি সিরিজের নোট মডেলের স্মার্টফোন বাজারে তুমুল জনপ্রিয়। যা এই স্যামসাং ব্র্যান্ডেরই। এ সময়ে এদের জনপ্রিয় ফোনগুলির মধ্যে রয়েছে Samsung Galaxy F12, Samsung Galaxy F62, Samsung Galaxy M12, Samsung Galaxy A52 ইত্যাদি।
3. হুয়াওয়েই (HUAWEI)
আমাদের তালিকায় দ্বিতীয় ব্র্যান্ড হুয়াওয়েই৷ ১৯৮৭ চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের শেনচেন শহরে প্রতিষ্ঠিত এ ব্রান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা রেন চেংফেই। চীনা ভাষায় নামকরণকৃত হুয়াওয়েইর অর্থ ফুলের অর্জন বা ফুলের কাজ৷ হুয়াওয়েই মোবাইল ব্র্যান্ড হিসেবে ২০১২ সাল থেকে জনপ্রিয়তার দৌঁড়ে বেশ ভালো গতি লাভ করে। এ সময়ে এরিকসনকে টপকে বিশ্বের সব থেকে বড় টেলিকমিউনিকেশন উপকরণ নির্মাতার স্থান দখল করে । বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৭০ টি দেশে সুনামের সাথে বাজার দখলে রেখেছে হুয়াওয়েই৷বাজারে হুয়াওয়েই এর জনপ্রিয় মডেলের স্মার্টফোন হচ্ছে Huawei Y9s, Huawei Mate 30 Pro, Huawei P30 Lite, Huawei Y9 (2019), Huawei Enjoy 8. বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পত্তির পরিমান হলো ৫৭.৩১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
4. অ্যাপল আইফোন (Apple IPhone)
অ্যাপলের আইফোন আমাদের তালিকার তৃতীয় স্থানে৷ অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা হলেন যৌথভাবে স্টিভ জবস, স্টিভ ওজনিয়াক, রোনাল্ড ওয়েন। তাদের যৌথ উদ্দোগে এ কোম্পানির যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে, আমেরিকায়৷ অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড হচ্ছে আমেরিকার বিখ্যাত বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি৷ কনজুমার ইলেকট্রিক, কম্পিউটার সফটওয়্যার, এবং অনলাইন সেবা ডিজাইন, ডেভলপ ও বিক্রি করে থাকে অ্যাপল। কোম্পানিটির হার্ডওয়্যার পণ্যের মধ্যে আইফোন স্মার্টফোন, আইপ্যাড ট্যাবলেট কম্পিউটার রয়েছে৷এছাড়াও ম্যাক ব্যক্তিগত কম্পিউটার, আইপড বহনযোগ্য মিডিয়া প্লেয়ার, অ্যাপল ওয়াচ স্মার্টওয়াচ, ও অ্যাপল টিভি ডিজিটাল মিডিয়া প্লেয়ার রয়েছে। স্মার্টফোন ছাড়া আরো অনেক ধরণের পণ্য তৈরি করে৷ তৈরিকৃত এসকল পন্যগুলো হচ্ছে আইপ্যাড, অ্যাপল ওয়াচ, অ্যাপল টিভি, হোমপড ম্যাক ও এসআই ওএস,ওয়াচওএস টিভিওএস আইলাইফ।অ্যাপল আইফোন ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় কিছু ফোনের মধ্য রয়েছে iPhone 7, Apple iPhone 11, iPhone 7 Plus, iPhone 8, Apple iPhone XS Max. iPhone 13,14.এই মুহুর্তে বিশ্বব্যাপী বিক্রি হওয়া মোট স্মার্টফোনের ১০.৩ শতাংশ অ্যাপেল আইফোন।
5. শাওমি (Xiaomi)
শাওমি আমাদের তালিকার ৪র্থ নাম্বারে অবস্থান করছে৷ শাওমি কর্পোরেশন ২০১০ সালে তাদের যাত্রা শুরু করেন। শাওমির প্রতিষ্ঠাতা হলেন চীনা নাগরিক লি জুন।শাওমির মোট সম্পত্তির পরিমান CN¥১৮৩.৬২৯ billion। বর্তমানে এদের কর্মীসংখ্যা ১৮১৭০ জন।শাওমির ফোনগুলির মধ্যে Xiaomi Mi 3, Xiaomi Redmi 3s, Xiaomi Redmi 4X 3GB / 32GB, Xiaomi Redmi 5, Xiaomi Redmi 4 Prime অন্যতম।বিশ্বের স্মার্টফোন বাজারের ৯ শতাংশ দখল করে রয়েছে বেইজিংয়ের কোম্পানিটি।
6.ওপো(OPPO):
ওপো স্মার্টফোনটি শীর্ষ ৫ নাম্বারে অবস্থান করছে। অপো ইলেকট্রনিকস চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। ওপো সংস্থাটি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৬ সালে ওপো (OPPO) নামটি ব্রান্ড নাম হিসেবে বিশ্বব্যাপী নিবন্ধিত করা হয়।ওপো ফোনের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে সেলফিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ ফোন এই ওপো। বর্তমানে ওপোর জনপ্রিয় মডেলের মধ্যে রয়েছে OPPO F19 Pro Plus 5G, OPPO F19 Pro, OPPO Reno 5 Pro 5G, OPPO A53 2020, OPPO A15.ওপোর বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বাজারে শেয়ার ৮.১ শতাংশ।
7.ভিভো(VIVO):
বিশ্বের সেরা মোবাইলফোন ব্র্যান্ডের তালিকায় ৬ষ্ঠ অবস্থানে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ভিভো(VIVO)। ভিভো চীনা ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। ভিভোর যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠাতা শেন উইয়ের মাধ্যেমে। বর্তমানে মোবাইল বাজারের ৭.৫ শতাংশ দখল করে রয়েছে ব্র্যান্ড ভিভো।
8.মটোরোলা (MOTOROLA):
আমাদের বাংলাদেশে তেমন একটা পরিচিত ব্রান্ড না হলেও মটোরোলা ওয়াল্ড ওয়াইড অনেকটা জনপ্রিয়। ১৯২৮ সালে যাত্রা শুরু আমেরিকান এ মোবাইল ব্র্যান্ড।বর্তমান মটোরোলো ইনকর্পোরেটের প্রধান হলেন ড্যান মলনি। মটোরোলা ব্রান্ডের অন্যান্য প্রোডাক্ট হচ্ছে ট্যাবলেট,কম্পিউটার ইত্যাদি।
9.লেনোভো (LENOVO):
লেনোভো আমাদের বাংলাদেশের বাজারেও অনেক জনপ্রিয় একটি ব্রান্ডের নাম। লেনোভো গ্রুপ লিমিটেড একটি চীনা বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এর সদর দপ্তর বেইজিং এবং নর্থ ক্যারোলাইনায়।মোবাইল ফোনের পাশাপাশি লেনোভো কম্পিউটার ও বিক্রি করে৷ বিক্রির হিসাবে ২০১২ সালে লেনোভো ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কম্পিউটার বিক্রেতা।লেনোভো বিশ্বের ৬০টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ১৬০টি দেশে পণ্য বিক্রয় করে থাকে। বিশ্ব বাজারের ৩ শতাংশ স্থান দখল করে বিশ্বের সেরা মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে লেনোভো।
10.এলজি(LG):
বিশ্ববাজারে এলজি মোবাইল ব্রান্ড আমাদের এই তালিকায় ৯ম স্থান দখল করে নিয়েছে। এলজি হলো হলো একটি কোরিয়ান ব্রান্ড। এটি ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটির সদরদপ্তর হলো শিউল,দক্ষিণ কোরিয়া।স্মার্টফোন বাজারের ২.২ শতাংশ দখল করে রয়েছে এলজি।
বর্তমান মোবাইল ফোনের বাজারে তীব্র প্রতিযোগীতার মাঝে এ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে বিশ্বের সেরা মোবাইল ব্র্যান্ড হিসেবে স্থান করে নিয়েছে৷