বিড়াল সম্পর্কিয় ৫টি অজানা কথা।

1 Shares
0
0
1

বিড়াল গৃহপালিত একটি ছোট মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণী। বিড়াল ছানা দেখতে মায়াবী বলে আমরা অনেকেই শখ করে  বিড়াল ছানা পুষে থাকি। সেজন্য আমাদের এই বিড়াল সর্ম্পকিয় কিছু তথ্য জানা প্রয়োজন। বিড়াল প্রানীটি শারীরটি সাধারণত অন্যান্য ফেলিডি প্রাণীর অনুরূপে দৃঢ় নমনীয় শরীর, ত্বরিত প্রতিক্রিয়াশীল, এবং তীক্ষ্ণ দাঁত। বিড়াল প্রানীটি ক্ষুদ্র শিকারে পারদর্শী হয়ে থাকে। এদের নৈশদৃষ্টি এবং ঘ্রাণশক্তি খুব প্রখর। তবে বিড়ালেরবর্ণের দৃশ্যমানতা দরিদ্র।এক এক বিড়ালের কণ্ঠস্বরের ব্যবহার যেমন- মিয়াও, গরগর (প্যুর), কম্পনজাত (ট্রিল) শব্দ, হিস, গর্জন এবং গোঁ গোঁ শব্দ করা প্রভৃতি কণ্ঠ্যবর্ণের ব্যবহারের পাশাপাশি বিড়ালের নির্দিষ্ট ভাষা রয়েছে। বিড়াল একক শিকারী হওয়া সত্ত্বেও সামাজিক প্রজাতির। মানুষের কানের তুলনায় বিড়াল খুব তীক্ষ্ণ এবং খুব উচ্চ শব্দ কম্পাঙ্ক শুনতে পায়, যেমন ইঁদুর অথবা অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণীর দ্বারা সৃষ্ট শব্দ। এরা শিকারী প্রবুত্তির হওয়ায় ভোর ও সন্ধ্যায় সর্বাধিক সক্রিয় থাকে। এছাড়াও এরা নিজ প্রজাতির সাথে অপ্রকাশ্য এবং ফেরোমোন( ফেরোমন হচ্ছে রাসায়নিক পদার্থ যা স্বতন্ত্রভাবে শরীরের বাইরে ক্ষরিত হয় এবং হরমোনের মত আচরণ করে) অনুভূতি দ্বারা যোগাযোগ করতে সক্ষম।

আমরা যারা বাসা-বাড়িতে বিড়াল পালি তারা প্রায়ই বিড়াল ছানা সম্পর্কে তথ্য সব কিছু ভালোভাবে জানি না। যেমন- 

১.বিড়াল এর নাক ঘামে কেন? 

২.বিড়াল যখন ঘুমায় তখন চার পা উপরের দিক করে ঘুমায় কেন? 

৩.বিড়াল বুমি করলে কি করতে হবে? 

৪.বিড়ালের খাবার? I

৫.বিড়াল ছানা বাসায় আনার পর কত দিন পর গোসল করাতে হবে? ৬.বিড়ালের অভ্যাস গড়ে তোলা?

বিড়াল এর নাক ঘামে কেনঃ

আমরা যারা বিড়াল পালি তারা বিড়ালের নাক র্স্পশ করলে দেখি বিড়াল ভেজা এবং ঠান্ডা নাক। বিড়াল এর নাক ঘামে কারণ একটি বিড়ালের নাকের দুটি অনুনাসিক প্যাসেজ থাকে, যার মধ্যে একটি কার্টিলাজিনাস সেপ্টাম থাকে। বিড়ালের নাক হচ্ছে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয় অঙ্গগুলির মধ্যে একটি। তাদের ঘ্রাণশক্তি মানুষের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সংবেদনশীল। তারা তাদের উপাদান উপাদানের মধ্যে গন্ধ আলাদা করতে সক্ষম হয়, এবং এইভাবে বস্তু সনাক্ত করতে এবং খুঁজে পেতে, বিপদ সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

বিড়ালের নাক ঠান্ডা এবং আর্দ্র থাকে। দিনের বেলা, এটি তার অবস্থা সামান্য পরিবর্তন করতে পারে – গরম এবং শুষ্ক হয়ে যায়।, সাধারণত স্বাভাবিক অবস্থা থেকে কোনো বিচ্যুতি স্বল্পস্থায়ী হয়। যদি নাকটি খুব ঠান্ডা বা গরম, বেশ কয়েক ঘন্টা বা পুরো দিন ধরে খুব ভিজে বা শুকনো থাকে। বিড়ালের ভেজা নাকের অর্থ- হলো বিড়ালের কোনও সুস্পষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা নেই, অন্তত শ্বাসযন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। তবে শুধুমাত্র নাকের অবস্থার দ্বারা রোগের অনুপস্থিতির বিচার করাও অসম্ভব। আমাদের গৃহপালিত বিড়ালের উপরে বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ। যাতে বিড়ালের নাক ভেজা থাকে এবং স্বাভাবিক বোধ করে ।

বিড়াল বমি করে কেনঃ

আমরা প্রায় সময় দেখি পোষা বিড়াল বমি করছে। বিড়াল বিভিন্ন কারনে বমি করে থাকে। এরমধ্যে একটা সাধারন কারন হতে পারে দ্রুত খাবার খেয়ে ফেলা। আবার অনেক সময় নানারকম সিরিয়াস কারনেও বমি করতে পারে। তখন খুব দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। সাধারনত খাবার ছাড়া অন্যকিছু খেয়ে ফেলা, অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা, খাওয়ার সাথে সাথেই খেলা এসব কারনে বিড়াল বমি করে থাকে। গ্যাস্ট্রোইনটেসটাইনাল অথবা শরীরের সাধারন কাজের ব্যঘাত ঘটলেও বিড়ালের বমি করার প্রবনতা রয়েছে। 

কারণঃ- (হঠাৎ এবং তীব্র বমির ক্ষেত্রে)

খাবারের পরিবর্তন, খাবারে অসহিষ্ণুতা, কৃমি, গ্যাস্ট্রোইনটেসটাইনাল নালীর প্রদাহ, হেয়ার বল বা খেলনা খেয়ে ফেলা, কিডনী অকেজো হয়ে যাওয়া, ভাইরাস জনিত কারন, বিষ বা রাসায়নিক পদার্থ খেয়ে ফেলা, অগ্নাশয়ের সমস্যা, ঔষধের প্রতিক্রিয়া, অপারেশনের পরবর্তী সময়, কোষ্ঠ কাঠিন্য, পায়ু পথের প্রদাহ, হৃদপিন্ড পোকা দ্বারা সংক্রমিত হলে, স্নায়ু সম্পর্কিত রোগ হলে।

লক্ষন সমূহঃ– একবার বা দুইবার বমি হবার পর যদি বিড়ালের খাবার গ্রহন, চলাফেরা স্বাভাবিক হয়ে গেলে এটি নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। কিন্তু যদি বমির সাথে ডায়রিয়া, পানি শূণ্যতা, তন্দ্রা ভাব থাকা, রক্ত বমি হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুদা এবং পানি পান করার পরিবর্তন হয় তাহলে সাথে সাথে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।

চিকিৎসাঃ- বমি হওয়ার পর পর বিড়ালকে কোনো খাবার এবং পানীয় না দেওয়া। কমপক্ষে ২ঘন্টা পর অল্প করে পানি পান করানো এবং ধীরে ধীরে নরম খাবার খাওয়ানো। যেমনঃ সিদ্ধ আলু, চামড়া ছাড়ানো রান্নাকরা মুরগীর মাংস। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তরল খাবারের মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হয় অথবা বমির উদ্রেগ উপশমকারী ঔষধ দিতে হয়। সঠিক চিকিৎসা নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের উপদেশ নেয়া উত্তম।

বিড়াল ছানা গোসলঃ

বিড়াল ছানা বাসায় আনার পর প্রায় এক সপ্তাহ পর গোসল করাতে হবে। বিড়াল স্বভাবগতভাবেই পরিচ্ছন্ন প্রাণী। তারপরও তার পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার দিকে রাখতে হবে বিশেষ খেয়াল। প্রতি মাসে বিড়ালকে অন্তত দুই থেকে তিনবার গোসল করাতে হবে। বিড়াল যেহেতু পানি সংস্পর্শ পছন্দ করে না, গোসলের সময় শুধু  ঠাণ্ডা পানি না ব্যবহার করা, ঠাণ্ডা পানির সাথে গরম পানি মিশিয়ে সব সময় গোসল করানো। তাই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হতে পারে। বিশেষ করে শীতকালে গোসল করার আগে রোদেলা দিন বেছে নিন। যাতে করে গোসল শেষে তাকে রোদে রাখা যায়। এতে বিড়ালের অসুখ হওয়ার আশঙ্কা বেশ কমে যায়। গোসলের সময় লোমের ময়লা দূর করার জন্য বিড়ালের জন্য বিশেষায়িত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। গোসল শেষে বিড়ালের লোম ভালোভাবে মুছে দিন। তারপরও বিড়ালের শরীরে পানি লেগে থাকলে সে নিজেই চেটে নিজের শরীর পরিষ্কার করে ফেলবে।

বিড়ালের খাওয়াদাওয়াঃ

বিড়ালকে প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে খাবার ও পানি সরবরাহ করতে হবে। বাচ্চা বিড়ালের বেলায় এ ব্যাপারে বেশি সচেতন থাকতে হবে। বিড়াল বাচ্চার বয়স যদি দেড় মাসের কম হয় তাহলে তরল খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন। দেড় মাসের বেশি বয়সী বিড়ালকে মসলা ছাড়া সেদ্ধ মাছ ও মাংস দিতে পারেন। লক্ষ্য রাখা কোনো কাচা মাংস, মাছ না খাওয়ানো। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্যাট ফুড পাওয়া যায়। সেটিও আমরা বিড়ালকে খাওয়াতে পারি। বিড়ালকে দুধ খাওয়ানোর প্রচলন অনেক পুরোনো। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, দুধের কিছু উপাদানের কারণে বিড়ালের ডায়রিয়া হতে পারে। তাই বিড়ালকে দুধ অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে।

বিড়ালের অভ্যাস গড়ে তোলাঃ

বিড়াল পোষার আগে আমরা কিছু বিষয়ে চিন্তিত হই যে বিড়ালের মলমূত্র ত্যাগ করা নিয়ে। কোথায় না কোথায় করে ঘরবাড়ি নোংরা করে ফেলে। আমরা যদি একটু চেষ্টা করলেই বিড়ালকে নির্দিষ্ট স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করানোর অভ্যাস করানো অর্থাৎ ‘পটি ট্রেইনড’ করা যায়। তবে এ অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে বিড়ালের জন্মের পর থেকে। বাজারে প্যাকেটজাত লিটার পাওয়া যায়। এই লিটার বক্সে বিড়াল মলমূত্র ত্যাগ করবে। তবে খেয়াল রাখবেন যেন নিয়মিত লিটার পরিষ্কার করা হয়। একটি গামলা বা যেকোনো পাত্র ব্যবহার করে এর ভেতরে বালু, কাগজের টুকরা দিয়ে সহজে বানিয়ে ফেলতে পারি বিড়ালের লিটার বক্স। এরপর আমরা বাসার নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে পারি। অনেকে একদম শুরু থেকেই বিড়ালকে বাসার বাইরে বিড়ালকে মলমূত্র ত্যাগ করার অভ্যাস করান। ফলে বিড়ালের মলমূত্র ত্যাগের সময় হলেই সে বাসার বাইরে গিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করে আসে।

বিড়ালের চিকিৎসাঃ

বিড়ালকে রোগমুক্ত রাখতে হলে প্রাণিচিকিৎসক বা ভেটকে দেখিয়ে বিড়ালের নিয়মিত চেকআপ করানো উচিত। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের টিকা সময়মতো দিলে অসুখ–বিসুখের আশঙ্কা কমে যায়। বিড়ালের চিকিৎসার জন্য ঢাকার গুলিস্তানে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের বিপরীতে রয়েছে কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল। এ ছাড়া পোষা প্রাণীদের জন্য বেশ কিছু বেসরকারি ক্লিনিক এবং ভেটেরিনারি ডাক্তারের চেম্বার রয়েছে।বিড়ালকে নিয়মিত বিভিন্ন রোগের টিকা দিতে হবে। যাতে করে রোগবালাই কম হয়। এর মধ্যে খুব জরুরি হচ্ছে রেবিসিন ভ্যাকসিন দেওয়া। কারণ এটি জলাতঙ্ক রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে।

পোষা বিড়াল চার পা উপরে দিক করে ঘুমায়ঃ

বিড়ালের সব থেকে স্পর্শ স্থান হলো পেট। বাহিরের বিড়াল যখন এক বিড়াল অন্য বিড়ালকে আক্রমণ করে তখন সে তার স্পর্শণীয় স্থান রক্ষা করে থাকে। বাড়িতে পোষা বিড়াল চার পা উপরে দিক করে ঘুমায় কারণ বিড়াল বিশ্বাস করে যে তাকে কোনো মারা হবে না, তার সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করবে না। তাই পোষা বিড়াল চার পা উপর দিক করে ঘুমায়।

সতর্কতাঃ

বাসায় বিড়াল আনার পর খেয়াল করতে হবে যে বাসার জানালা দিয়ে বিড়াল বের হতে পারে কি না। কারণ, অনেক সময় জানালা দিয়ে বিড়াল নিচে পড়ে গিয়ে আহত হতে পারে। বাসায় ঘুরতে আসা অতিথিরা যদি বিড়াল পছন্দ না করেন, তাহলে বিড়ালকে অন্য ঘরে রেখে দরজা আটকিয়ে রাখতে পারি। অনেকেই ভাবি যে বিড়ালের লোম বাসা অপরিষ্কারের কারণ হতে পারে। তবে এটা নিয়ে এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই, কারণ নিয়মিত গোসল এবং চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে দিলে লোম কম ঝরে।

ঢাকায় পোষা প্রাণিচিকিৎসার কয়েকটি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্রাণিচিকিৎসকের নাম ও ঠিকানা

১. কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল, ৪৮ কাজী আলাউদ্দিন রোড, গুলিস্তান।

২. কেয়ার ফর প’স ধানমন্ডি।

৩. ড. সিয়ামাক’স পেট ক্লিনিক উত্তরা।

৪. প লাইফ কেয়ার লালমাটিয়া, ঢাকা।

৫. অভয়ারণ্য, মহাখালী।

লেখক : খাদিজা আক্তার লাবনী। S.S.C পরীক্ষার্থী।বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ সাভার , ঢাকা।

1 Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You May Also Like
cat

১০ টি খাবার যা বিড়ালকে জন্য হতে পারে ক্ষতিকর ?

অনেকেই বাড়িতে বিড়াল পুষতে পছন্দ করেন। পোষা প্রাণীটি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে ওই পরিবারের সদস্য। যারা বিড়াল পোষেন…
Read More