ঔষধ বলতে সাধারণত ক্যাপসুল এবং ট্যাবলেটকেই সাধারনভাবে ধরা যায়। মানবদেহে ঔষধ প্রবেশ করে বিভিন্ন কোষের সাথে কাজ করে। এই কাজের ফলাফল হিসেবে আমরা সুস্থতা বোধ করি।আমরা অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ঔষধ খেয়ে থাকি। আমাদের শরীরে এসব ঔষধ কিভাবে কাজ করে? মানবদেহে ঔষধের কার্যপ্রণালী কেমন?
শরীরের কোথায় কিভাবে ঔষধ কাজ করে?
একটি উদাহরণ মাধ্যমে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা যাক : ক্যাপসুলের কথাই ধরা যাক। এর বাইরে একটি আবরণ থাকে; যেটি সাধারণত জেলাটিন নামক একটি পদার্থ। প্রাণী কোলাজেন টিস্যু থেকে জেলাটিন প্রস্তুত করা হয়। এটি বর্ণহীন, গন্ধহীন এবং স্বচ্ছ ধরণের পদার্থ।
প্রায় সকল প্রকার ঔষধ ২ ধরনের উপাদানের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। তা হলো
- সক্রিয় উপাদান
- নিষ্ক্রিয় উপাদান।
তবে মানব দেহে ঔষধের সক্রিয় উপাদান গুলো প্রধান কাজ করে। আর নিষ্ক্রিয় বা এক্সিপিয়েন্ট এর ভূমিকা গৌণ।
নিষ্ক্রিয় বা এক্সিপিয়েন্ট
নিষ্ক্রিয় উপাদান বা এক্সিপিয়েন্ট এর কাজ কম হলেও সাধারণত একটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলে এটি বেশ ভাল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। এর কারণ হলো – কিছু ঔষধের জন্য সক্রিয় উপাদান খুব অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। এর পরিমান সাধারণত ১০০ এর কম বেশি মাইক্রোগ্রামের মতো।এই সামান্য পরিমাণ উপাদান দিয়ে একটি আস্ত ক্যাপসুল অথবা ট্যাবলেট প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। এজন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট এর আকৃতিতে আনার জন্য এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিষ্ক্রিয় উপাদান মেশানো হয়।
মানব দেহে এর কার্যপ্রণালী কেমন?
মানব দেহের বিভিন্ন কাজ প্রোটিন দ্বারা সম্পাদিত হয়ে থাকে। এই প্রোটিনগুলো বিভিন্ন আকৃতিতে আমাদের দেহে অবস্থিত। দেহের বিভিন্ন কাজে এই প্রোটিন গুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।এই প্রোটিন গুলো শরীরের বিভিন্ন কোষের সাথে কাজ করে থাকে। প্রতিটি প্রোটিনের নির্ধারিত কাজ রয়েছে এবং এটি নির্দিষ্ট কোষের সঙ্গে কাজ করে। যে ঔষধ যে উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হয়; সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য এই প্রোটিন গুলো কাজ করে।
ঔষধ মানব দেহে কোষের সাথে ২ভাবে কাজ করে।
- একটি হলো – কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রমে পরিবর্তন এনে
- দ্বিতীয়টি হলো কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে। রোগের সমাধান কোষের পরিবর্তনে রয়েছে অথবা কোষের সাধারণ কার্যক্রম বন্ধে।
উদাহরণস্বরূপ, প্যারাসিটামল ঔষধের ব্যাপারে বলা যায়। এটি একটি জ্বর এবং ব্যথানাশক ঔষধ। বিজ্ঞানীদের মতে, অন্যান্য ব্যথানাশক ঔষধের মতো প্যারাসিটামল মানব দেহের কক্স নামক এনজাইমকে বাধাগ্রস্থ করার মাধ্যমে কাজ করে।কক্স এনজাইমটি মানবদেহে প্রদাহ বা ব্যাথা হওয়ার কারণ। এই কোষটির কাজে প্যারাসিটামল বাঁধা দেয়ার মাধ্যমে কাজ করে। কক্স এনজাইমের কাজ বাধাগ্রস্ত হলে তা প্রস্টাগ্ল্যান্ডিং কে ব্যাথা ও জ্বর উৎপন্ন করতে দেয়না। ফলে ব্যাথা এবং জ্বর কমে যায়।
আশা করি, উপরের লেখাগুলো পড়ার পর আপনি মানব দেহে ঔষধের কার্যপ্রণালী সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছেন এবং ঔষধ কিভাবে কাজ করে?
অনেক সময় ঔষধ গ্রহন করার পরও আমরা ভাল ফল পাইনা; ঔষধ আমাদের দেহে কাজ করে না। আবার অনেকে রোগাক্রান্ত হলেও কোন প্রকার ঔষধ গ্রহন ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠে
এর কারণ হলো – ঔষধ আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের দেহে কাজ করে। যেকোন ঔষধ গ্রহনের পূর্বে অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন। আন্দাজে ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা, ভুল ঔষধ গ্রহনে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।