ব্র্যান্ড” (Brand) শব্দটির সাথে আপনি হয়তো কমবেশি পরিচিত। আমেরিকান মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ব্র্যান্ড বলতে এমন কোন নাম, শব্দ, ডিজাইন, প্রতীক বা অন্য কোন ফিচার বোঝায় যা কোন একজন বিক্রেতার পণ্য বা সেবাকে অন্যান্য পণ্য বা সেবা থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে। অর্থাৎ এটি মূলত বাজারে আপনার প্রোডাক্ট বা প্রতিষ্ঠানের জন্য নিজস্ব জায়গা তৈরি করে। এ প্রক্রিয়াকেই ব্র্যান্ডিং বলা হয়ে থাকে।ব্র্যান্ড একটি বিস্তার ধারণা যার ভেতর অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর এ কাজটি করে থাকে একজন দক্ষ মার্কেটিং ম্যানেজার। তাহলে ব্র্যান্ড মার্কেটিং জিনিস টা কি? ব্র্যান্ড মার্কেটিং হলো একটি মাধ্যম যার দ্বারা আপনি আপনার কোম্পানির সমস্ত প্রোডাক্ট আপনার ব্র্যান্ড এর নামে প্রচার করতে পারবেন। মুলত আপনার কোম্পানির সার্ভিস অথবা আপনার প্রোডাক্ট এর প্রচার প্রচারণা চালাতে ব্র্যান্ড মার্কেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ব্র্যান্ড মার্কেটিং কি?
ব্র্যান্ড মার্কেটিং বলতে যা বুঝায় তা হলো, কোন নির্দিষ্ট কোম্পানির পন্য গুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরার যে প্রক্রিয়া। সহজ কথায় হচ্ছে মার্কেটিং কৌশল । একটা উদাহরণ এর দ্বারা পুরো বিষয়টা ভালো ভাবে বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণ দেয়া যাক, ধরো একটি কোম্পানি আছে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি হয়। কোম্পানির ব্র্যান্ড এর নাম LG. এখন এল.জি একটি সতন্ত্র ব্র্যান্ড এবং এল.জি ব্র্যান্ড এর ভেতর বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট থাকতে পারে। যেমন: ফ্রিজ, চার্জার ফ্যান, টিভি, মাইক্রোওভেন, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি। এরকম আরও বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে যেমন ওয়াল্টন। এখন এই সকল প্রোডাক্ট সেল করার জন্য যখন একটি কোম্পানি কাস্টমারদেরকে ইনডিরেক্টলি ফোর্স করে তখন সেটি হয়ে যায় মার্কেটিং। একটি কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট সেল করার জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। তারা কাস্টমার দের কে এটা বোঝায় যে তাদের প্রোডাক্ট দামে কম মানে ভালো। যার ফলে একজন ক্রেতা প্রোডাক্টটি ক্রয় করে। মুলত মার্কেটিং একটি কোম্পানির ব্র্যান্ডের পরিচিতি গঠন করে থাকে।
এছাড়া আর একটি সহজ উদাহরণ দেয়া যাক। ধরি কয়েকটি সাবানের ব্র্যান্ডের নাম বলতে বলা হলে এর মধ্যে ‘লাক্স’ সাবানের নাম থাকার সম্ভাবনা অনেক। আবার আমরা জানি যে, এর সাথে ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার সম্পর্ক রয়েছে। এ ধারণাটি লাক্স সাবানের ব্র্যান্ডিংয়ের একটি অংশ।
ব্র্যান্ডিংয়ের গুরুত্ব কি?
১. ব্র্যান্ডিং আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে মানুষের মধ্যে আলাদাভাবে পরিচিত করে।
একজন মানুষের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে। তার আচার-আচরণ, পছন্দ-অপছন্দ, জামাকাপড়ের ধরন, বন্ধুবান্ধব, কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে তার একটি স্বকীয় পরিচয় আমাদের মাঝে তৈরি হয়। একটি পণ্য বা প্রতিষ্ঠানেরও এমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি একে চিনতে পারেন।
২. ব্র্যান্ডিং ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে আলাদা অবস্থান দেয়।
বাজারে একই ধরনের বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়। কিন্তু যেসব পণ্যের ব্যাপারে মানুষের ইতিবাচক ধারণা বেশি, সেগুলোর বিক্রির হারও বেশি। যেমন, জুতার বাজারে ‘বাটা’ ব্র্যান্ডের আলাদা কদর রয়েছে।
৩. কাস্টমারদের সাথে আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের একটি সম্পর্ক তৈরি হয় ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে।
শুনতে অদ্ভুত শোনালেও এটা সত্যি! কোন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং ভালো হলে কাস্টমারদের আস্থা অর্জন করা সহজ হয়। এতে করে তারা বারবার আপনার পণ্যের কাছেই ফিরে আসবে।
৪. প্রতিষ্ঠানে ভালো কর্মী আকৃষ্ট করতে আপনাকে সহায়তা করে ব্র্যান্ডিং।
ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের একটি সামাজিক মূল্য তৈরি হয়। এর মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। যেমন, মাইক্রোসফট বা গুগলের কথা ধরা যাক। ব্র্যান্ড হিসাবে তাদের পরিচিতি এত ভালো যে পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষ ও মেধাবী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের স্বপ্ন থাকে এ কোম্পানিগুলোতে কাজ করার।
মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিংয়ের মধ্যে ৫ টি পার্থক্য
ব্র্যান্ডিং হল আপনার কোম্পানির জন্য দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই ইমেজ তৈরি করা। এটি একটি অনন্য পরিচয় এবং ভয়েস বিকাশের বিষয়ে যা আপনি সময়ের সাথে সাথে লেগে থাকতে পারেন, বাজারের সাম্প্রতিক প্রবণতা বা পরিবর্তনগুলি নির্বিশেষে।
অন্যদিকে মার্কেটিং আরও স্বল্পমেয়াদী এবং কৌশলী। এটি বাজারে বর্তমান চাহিদা এবং চাওয়া চিহ্নিত করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের সাড়া দেওয়ার বিষয়ে। বিপণন প্রচারাভিযানগুলি প্রায়ই একটি বর্তমান প্রবণতা বা সুযোগকে পুঁজি করার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত জীবনকালের জন্য ডিজাইন করা হয়।
বিপণন এবং ব্র্যান্ডিংয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, তবে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি রয়েছে:
বিপণন হল ভোক্তাদের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য আপনি একটি পণ্যের সাথে যা করেন। গ্রাহকদের সাথে একটি মানসিক সংযোগ তৈরি করতে আপনি যা করেন তা হল ব্র্যান্ডিং।
বিপণন কৌশলগত এবং প্রবণতা বা প্রতিযোগিতার প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত পরিবর্তন করা যেতে পারে। ব্র্যান্ডিং কৌশলগত এবং একটি কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত।
মার্কেটিং বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। ব্র্যান্ডিং একটি পণ্য বা কোম্পানির জন্য একটি অনন্য পরিচয় তৈরি করার উপর ফোকাস করে।
মার্কেটিং হল চাহিদা তৈরি করা। ব্র্যান্ডিং হল ব্র্যান্ড ইক্যুইটি রক্ষা করে চাহিদা বজায় রাখা।
বিপণন স্বল্পমেয়াদী, যখন ব্র্যান্ডিং দীর্ঘমেয়াদী।
কিভাবে নিজের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করবেন?
নিজের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে মানুষের প্রয়োজনীয় এবং প্রতিনিয়ত তাদের কাজে লাগতেছে এমন একটা পণ্য বা সার্ভিস খুজে বের করতে হবে। কোন একটা বিষয় ঠিক করার আগে আপনাকে ঐ টা নিয়ে রিসার্চ করতে হবে। জানতে হবে ঐ পণ্য বা সার্ভিসটি কাদের প্রয়োজন, কারা এটি কাজে ব্যবহার করতেছে। কোন সময়ে এবং কেন ব্যবহার করতেছে। এই সকল কিছু আপনাকে রিসার্চ করে আইডিয়া নিতে হবে। প্রয়োজনে নোট করে রাখতে হবে।
একটা ব্র্যান্ড তৈরি হয় তার কাস্টমার এর ফিডব্যাক এর ভিত্তিতে। কাস্টমার আপনার পণ্য বা সার্ভিস গুলো গ্রহণ করে যতবেশি লাভবান হবে ততবেশি আপনার পণ্যের ভ্যালু বাড়তে থাকবে। এভাবে আস্তে আস্তে আপনার পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে সবাই জানতে পারবে এবং আপনার কোম্পানিটিও একটি ব্র্যান্ড এ পরিনত হবে। ব্র্যান্ডিং এর জন্য সবসময় চেস্টা করতে হবে ইউনিক কিছু করার জন্য। কাস্টমারকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য। গ্রাহককে সর্বোচ্ছটা দেওয়ার জন্য। এতে আপনি সহজেই ব্র্যান্ড তৈরি করতে এবং ব্রান্ড ভ্যালু বাড়াতে পারবেন|
সেরা ২৪ টি দেশিও টি ব্র্যান্ডের নাম
সেরা ৫০টি ব্র্যান্ডের তালিকায় ২৫টিই দেশি ব্র্যান্ড। এগুলো হলো
- তিব্বত বল সাবান
- ফাস্ট ওয়াশ
- ইস্পাহানী
- ফ্রেশ
- তীর
- স্যান্ডালিনা
- কোকোলা
- চাকা
- তিব্বত
- কেয়া
- মার্কস
- আলমের পঁচা সাবান
- মি. নুডুলস
- প্রাণ
- রাঁধুনী
- মেডি প্লাস
- চমক
- মেরিল
- পুষ্টি
- সিলন টি
- এসিআই
- কিউট
- স্যাভলন
- ম্যাজিক
বৈশ্বিক সেরা ব্র্যান্ড
কান্তারের হিসাবে বিশ্বব্যাপী সেরা ব্র্যান্ডের মধ্যে এক নম্বর অবস্থানে আছে কোকাকোলা। বিশ্বের ৪১ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে কোকাকোলা। একেকজন বছরে গড়ে প্রায় ১৩ বার কোকাকোলা কিনেছে। বিশ্বের সেরা ১০ ব্র্যান্ডের তালিকায় আরও রয়েছে কোলগেট, ম্যাগি, লাইফবয়, লেইস, পেপসি, নেসক্যাফে, ইন্দোমি, সানসিল্ক ও নর।