বংশগতির ধারক ও বাহক – Chromosome

0 Shares
0
0
0

‘বংশ হতে পাওয়া’, ‘বাবা থেকে পাওয়া’, ‘মায়ের মত হইছে’ এই রকম কথা আমরা কম বেশি সবাই শুনেছি। কিন্তু এর পেছনের বিজ্ঞানটা আমরা কতোটুকু জানি? চলুন আজকে না হয় একটু জানার চেষ্টা করি।

কোষ এবং ক্রোমোসোম

মানবদেহের একক হলো কোষ, একথা সবার জানা। অনেকগুলো কোষ নিয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত আর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে মানবদেহ। মানবদেহকে যদি একটি বিল্ডিং এর সাথে তুলনা করা হয় তবে প্রতিটি দেয়াল হবে এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আর প্রতিটি ইট হবে এর কোষ। তবে ইট খালি চোখে দেখা গেলেও দেহের সকল কোষ কিন্তু খালি চোখে দেখা যায় না। নিউক্লিয়াস হচ্ছে সেই কোষের প্রাণকেন্দ্র যার মধ্যে আছে বংশগতির ধারক ও বাহক ক্রোমোসোম। এই ক্রোমোসোমই মাতাপিতার বৈশিষ্ট্য বহন করে নিয়ে যায় সন্তানের দেহে। ক্রোমোসোমে থাকা ডিএনএ অণুতেই লিখিত থাকে জীবের সকল ধরণের বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেক মানুষের একটি কোষে মোট ২৩ জোড়া (৪৬ টি) ক্রোমোসোম আছে যার মধ্যে ২২ জোড়া অটোসোম যা দেহের সকল বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে আর ১ জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম বা লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোসোম যা আপনি ছেলে না মেয়ে তা নির্ধারণ করে। এই ৪৬ টি ক্রোমোসোমের ২৩ টি আসে মা হতে আর বাকি ২৩ টি আসে বাবা হতে। 

মানব কোষের ক্রোমোসোম (https://www.genome.gov)
উওজেনেসিস এবং স্পার্মাটোজেনেসিস এর প্রক্রিয়া (https://ib.bioninja.com)

ক্রোমোসোম সংখ্যা পুনরুদ্ধার

এখন প্রশ্ন আসতে পারে মা থেকে ২৩ জোড়া আর বাবা থেকে ২৩ জোড়া আসলে তো মোট ৪৬ জোড়া (৯২ টি) ক্রোমোজোম থাকার কথা সন্তানের। কিন্তু এমনটা হয় না। দৈহিক কার্যাবলির জন্য প্রতিটি প্রজন্মে ক্রোমোসোম সংখ্যা একই থাকা প্রয়োজন। আর এই একই সংখ্যাকে বজায় রাখতে দেহে ঘটে মিয়োসিস কোষ বিভাজন নামের এক জটিল প্রক্রিয়া। আমাদের দেহে প্রধানত দুই ধরনের কোষ পাওয়া যায়; দেহকোষ যা দৈহিক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে এবং জননকোষ যা থেকে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরি হয়।  মিয়োসিস প্রক্রিয়া জনন কোষকে বিভাজিত করে ডিম্বাণু বা শুক্রাণু কোষ তৈরি করে যাতে থাকে ২৩ টি ক্রোমোসোম। আর এই শুক্রাণু ডিম্বাণু মিলিত হয়ে যে ভ্রূণ তৈরি করে তাতে থাকে ৪৬ টি ক্রোমোসোম। এভাবেই ক্রোমোসোমের সংখ্যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পুনরুদ্ধার হয়। অপরদিকে, দেহকোষ মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে শুধু কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে; এরা বংশগতিতে কোনো ভূমিকা রাখে না।

নতুন প্রজন্ম

শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর মিলনের ফলে সৃষ্ট ভ্রূণ থেকে শুরু হয় নতুন প্রজন্মের যাত্রা। বারংবার মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ফলে ১টি থেকে ২টি, ২টি থেকে ৪টি, ৪টি থেকে ৮টি এভাবে ক্রমশ কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে; যার মাধ্যমে ভ্রূণ ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয় মানবশিশু তে। আর এভাবেই জীবের বৈশিষ্ট্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তে সঞ্চারিত হয়।

এবার বলুন তো আপনার ক্রোমোসোমের অর্ধেক মা হতে আর অর্ধেক বাবা হতে আসলেও আপনি কেনো অর্ধেক মা আর অর্ধেক বাবার মতো নন? 

উত্তর জানান কমেন্ট বক্সে।

Source:

লেখকঃ উম্মে সুরাইয়া

0 Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You May Also Like
what happens to us when we sleep

মানুষের শরীরে ঘুমের ৪টি পর্যায় ।

রাতে এই পৃথিবী প্রায় প্রত্যেকেই মানুষই অজ্ঞান এবং পক্ষাঘাতের অবস্থায় প্রবেশ করে যেটিকে ঘুম বলা হয় – কিন্তু,আমরা…
Read More

জানুন মাসিকের সময় কি করবেন ও কি করবেন না।

মাসিক এটা নারীদের একটি স্বাভাবিক বিষয়। প্রত্যেক নারী প্রতিমাসে যোনিপথ দিয়ে যে রক্তস্রাব হয় তাকে ঋতুস্রাব বা মাসিক…
Read More
5 ways to increase skin radiance.

৫ টি উপায়ে ত্বকের উজ্জ্বল বৃদ্ধি করার উপায়।

বাড়ি থেকে কাজ করার এবং মুখোশ পরার এক বছরেরও বেশি সময় পরে, আমরা আমাদের মেকআপ ব্যাগগুলিকে কিছুটা ঠান্ডা…
Read More
cat

১০ টি খাবার যা বিড়ালকে জন্য হতে পারে ক্ষতিকর ?

অনেকেই বাড়িতে বিড়াল পুষতে পছন্দ করেন। পোষা প্রাণীটি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে ওই পরিবারের সদস্য। যারা বিড়াল পোষেন…
Read More
What is color blindness?

কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধতা কি এবং এর কারণ-Color blindness & it’s causes

কালার ব্লাইন্ড এর সম্পর্কে আমাদের দেশে অনেকে জানেনা। কালার ব্লাইন্ড নামের চোখের রোগটা আমাদের দেশে ততটা পরিচিত না।…
Read More