কেমন হবে যদি বলা হয় আপনার আর টম ক্রুজের বা জ্যাকি চ্যান এর মধ্যে মিল ৯৯.৯% আর অমিল ০.১% । খুব বিস্মিতই হবেন বৈ কি! তবে এখানে যে মিল অমিলের কথা বলা হয়েছে তা হল জীনোম লেভেলের মিল অমিল।
জীনোম কি?
জীনোম বলতে জীবের বংশগতির সকল তথ্যকে বোঝায় যা ডিএনএ (DNA) এবং আরএনএ (RNA) তে (ভাইরাসের ক্ষেত্রে) কোড করা থাকে। ডিএনএ হল জীবদেহের সকল কাজের নির্দেশনা বহনকারী অণু। এই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রোটিন সংশ্লেষণ হয় এবং জীবদেহের সকল কার্য সম্পাদিত হয়। কোষের নিউক্লিয়াস ছাড়াও মাইটোকন্ড্রিয়া এবং উদ্ভিদকোষের প্লাস্টিডে ডিএনএ অণু পাওয়া যায়। এই সকল ধরণের ডিএনএ তে থাকা তথ্যকে সামগ্রিকভাবে জীনোম বলে।
ডিএনএ এর গঠন
অ্যাডেনিন (Adenine), থাইমিডিন (Thymidine), গুয়ানিন (Guanine) ও সাইটোসিন (Cytosine)- এই চারটি নিউক্লিওটাইড বেস হলো ডিএনএ এর মূল উপাদান; যাদেরকে A ,T, G, C এই চারটি বর্ণ দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং জেনেটিক লেটার নামেও এরা পরিচিত। এদের বিন্যাসক্রম (sequence) থাকে খুবই সুসজ্জিত এবং বেসগুলোর জোড় (base pair) সুনির্দিষ্ট। A জোড় বাধে T এর সাথে এবং G জোড় বাধে C এর সাথে। এই জোড়্গুলো একের পর এক যুক্ত হয়ে তৈরি করে বিশাল দ্বিসূত্রক ডিএনএ অনু। মানুষের ২৩ টি ক্রোমোসোমে বা হ্যাপ্লয়েড জীনোমে এই বেস পেয়ারের সংখ্যা প্রায় ৩.২ বিলিয়ন। এই চারটি লেটার বা বর্ণের বিন্যাসক্রমের মধ্যেই থাকে প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা। কোনো শব্দের অর্থ বোঝার জন্য তার অক্ষরের বিন্যাস সঠিকভাবে থাকাটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, মানবদেহের সকল কাজের জন্য এই জেনেটিক লেটারের বিন্যাস বা অর্ডারও ঠিক ততটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডিএনএ কে জীবের ব্লুপ্রিন্ট (Blue Print) ও বলা হয়। আর ক্রোমোসোম হল এই ডিএনএ এর প্যাঁচানো অবস্থা।
- বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি সফটওয়্যার কোম্পানি।
- ১০ টি খাবার যা বিড়ালকে জন্য হতে পারে ক্ষতিকর ?
- বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টি অনলাইন খাদ্য বিতরণ পরিষেবা ।
- বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টি ই-লার্নিং ওয়েবসাইট এবং শিক্ষামূলক অ্যাপ
- সেরা ১০টি বাংলাদেশী খাবার
জীনোমের মিল-অমিল
মানবদেহের এই ব্লুপ্রিন্টের অর্থোদ্ধারের জন্য ১৯৯০ সালে গবেষকরা শুরু করে হিউম্যান জীনোম প্রজেক্ট যা ২০০৩ সালের এপ্রিলে শেষ হয়। এই গবেষণার ফলস্বরূপ দেখা যায় প্রত্যেকটি মানুষের এই ৩.২ বিলিয়ন বেস পেয়ারের বিন্যাসক্রমের প্রায় ৯৯.৯% ই অভিন্ন। আর আমাদের পরস্পরের ভিন্নতার কারণ লুকিয়ে আছে বাকী ০.১% এর মধ্যে। বিন্যাসক্রমে যে বেস থাকার কথা সেটার পরিবর্তে যদি অন্য বেস থাকে তাহলে প্রোটিন তৈরির নির্দেশনায় পরিবর্তন আসে যা মানবদেহের গঠন এবং কার্যাবলীতে আনে পরিবর্তন। একই পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বা রক্তের গ্রুপ ভিন্ন হওয়া অথবা চুলের রঙ ভিন্ন হওয়া এসব কিছুর তথ্য পাওয়া যায় এই অমিল বিন্যাসক্রমে। অপরাধ তদন্তের ডিএনএ পরীক্ষায় এই ০.১% খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তো এখন আপনি কার সাথে মিল খুঁজে পেতে চান??
Source:
লেখকঃ উম্মে সুরাইয়া