মানুষ হিসেবে আমরা সবাই কিন্তু কথা বলতে পারি। তবে , আমরা কেউ কি ভেবে দেখেছি যে আমরা কয়জন সুন্দর ও গুছিয়ে কথা বলতে পারি । এখন হয়তো কেউ বলতে পারে যে এখানে আবার সুন্দর ভাবে বা গুছিয়ে কথা বলার কি আছে । আবার, কেউ এটিও মনে করতে পারে, “সুন্দর ও গুছিয়ে কথা বলা “—এ আর এমন কী!কিন্তু , আমরা অনেকেই জানি না যে, শুধু সুন্দর করে কথা বলতে পারা গুণটি আমাদের ক্যারিয়ারকে নিয়ে যেতে পারে এক অনন্য উচ্চতায়। যেমন , আমরা যখন আমাদের স্কুল লাইফে আমাদের শিক্ষকের সাথে কথা বলতাম তখন কিন্তু আমাদের অনেকেই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা হতো । এর জন্য আমরা যখন কোন কর্ম লাইফে যাই তখন আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। এজন্য আমরা যদি আমাদের স্কুল লাইফ থেকে কথা বলার ধরনটি পাল্টানোর চেষ্টা করে থাকি তাহলে আমরা যখন কোন শিক্ষকের সঙ্গে, ব্যবসায়িক বা কোনো উদ্ভাবনী ভাবনা উপস্থাপনের সময়, এমনকি করপোরেট দুনিয়ায় বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলতে পারা অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে করি । আবার কথা বলা কিন্তু একটি শিল্পও বটে। এই শিল্পটি সাবলীল কথা বলার মাধ্যমে আমরা আয়ত্ত করতে পারি ।
- বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি সফটওয়্যার কোম্পানি।
- ১০ টি খাবার যা বিড়ালকে জন্য হতে পারে ক্ষতিকর ?
- বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টি অনলাইন খাদ্য বিতরণ পরিষেবা ।
- বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টি ই-লার্নিং ওয়েবসাইট এবং শিক্ষামূলক অ্যাপ
- সেরা ১০টি বাংলাদেশী খাবার
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের তথ্যমতে, যাঁরা পেশাজীবনে প্রাঞ্জলভাবে কথা বলেন, তাঁদের সাফল্য আসে অতি দ্রুত। অন্যদিকে , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহকারী অধ্যাপক ও বিজনেস কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ সাইফ নোমান খান জানালেন কীভাবে সাবলীলভাবে কথা বলার চর্চা করবেন তার জন্য ১০ টি উদ্বাবন করছেন ।
১. শরীর ও মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে শিক্ষা:
আমরা অনেকেই কথা বলার সময় হাসিমুখে কথা বলে থাকি না , যেটি আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল করে থাকি । এর জন্য কথা বলার সময় আমাদের হাসিমুখে থাকা অতি জরুরি । তাই , হাসিমুখে কথা বলা শিখুন আর শরীরী ভাষার দিকে নজর দিন।কথা বলার সময় আপনি হাত কোথায় রাখছেন, ঘাড় কতটুকু বাঁকাচ্ছেন কিংবা ভ্রু কতটুকু ব্যবহার করছেন—সবটাই খেয়াল করুন । চোখে চোখ রেখে কথা বলা শিখুন। যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁর দিকে না তাকিয়ে কথা বলা অসম্মান ও অভদ্রতা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরী ভাষা সংশোধনে সময় নিন। টানা পাঁচ সপ্তাহ এমন চেষ্টা করুন, দেখবেন যে অনেক খানি নিজের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে ।
২. আঞ্চলিকতার টান পরিহার করতে শিক্ষা :
আমরা অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পেশাদারি যেকোনো কাজে যাই তখন কথা বলার সময় আমাদের অনেকেরই কথার মধ্যে একটা আঞ্চলিকতার টান থেকে যায়। যেটি আমাদের পরিহারের চেষ্টা করা দরকার বলে আমি মনে করি। শুরুতে হয়তো সমস্যা হবে, কিন্তু আঞ্চলিকতায় কথা বলা পরিহার করা আমাদের ধরকার। আমরা যদি টানা ছয়-সাত সপ্তাহ এই আঞ্চলিকতায় কথা বলা পরিহার করার চেষ্টা করি। তাহলে, আমরা হয়তো একটা সময় এটি কমিয়ে আনতে পারবো।আর, ইংরেজিতে কথা বলার সময় আমরা যদি পরিষ্কারভাবে ব্রিটিশ কিংবা আমেরিকান উচ্চারণ অনুসরণ করি তাহলে এটি আমাদের কর্মজীবনে অনেক কাজে দিবে। তারপর, আমরা যদি কথার মধ্যে কখন, কীভাবে, কতটুকু বিরতি নিতে হয়, তা যদি আমরা নিজেই উপলব্ধি করি এতে আমাদের আঞ্চলিকতা অনেক খানি দুর হয়ে যাবে।
৩. বুঝে কথা বলা এবং শ্রোতাকে বুঝা:
আমরা অনেকেই আছি যে, কারো কথা না বুঝেই সাথে সাথে তার উত্তর দিয়ে দেই। আর, এই ভুলটি আমরা সবচেয়ে বেশি করে থাকি। এজন্য, কথা বলার সময় আমাদের মুখ আর মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয় আনার চেষ্টা করা দরকার । তারপর, কথা শুরুর আগে কী বলব তা গুছিয়ে নেওয়া, প্রয়োজনে টুকরো কাগজে লিখে নেওয়া। আমরা যাঁর সঙ্গে কথা বলব, তার কথা বুঝতে পারছি কি না, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া। আমরা কী বলছি, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের শ্রোতারা কী শুনছে বা কী বুঝছে। এছাড়াও, আমাদের কথায় আত্মবিশ্বাস থাকা দরকার। যেটি আমাদেরকে কথা বলতে অনেক সাহায্য করবে।
৪. বক্তৃতার ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়া :
আমরা অনেকেই অনেক সময় বিভিন্ন বির্তক প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করে থাকি । এছাড়াও , আমাদেরকে অনেক সময় বিভিন্ন মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলে থাকি । যেখানে আমাদেরকে অনেক কৌশলে কথা বলতে হয় । সেটি হচ্ছে , শ্রোতাদের চোখে তাকিয়ে কথা বলা এবং শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে আমাদের স্ক্রিপ্ট এ পরিবর্তন আনা। এরপর খুব দ্রুত কথা বলছি কি না, সেটা বুঝার জন্য আগে থেকে নিজেই নিজের কথা মুঠোফোনে রেকর্ড করে সেটি শুনা। সর্বশেষ মঞ্চে উঠার আগে থেকেই তা অনুশীলন করা।কথা বলার সময় আমরা অনেকই সেই কথাটি গুছিয়ে নেই না। এই জন্য আমাদের অনেকেরই সমস্যার সম্মুক্ষিন হতে হয়। সেজন্য আমাদেরকে অবশ্যই কথা বলার আগ মুহূর্তে সেই কথা গুলি গুছিয়ে নেওয়া অথবা অন্তত একটা ছক তৈরি করে নেওয়া। যেমন- প্রথম মিনিটে কী বলব, দ্বিতীয় মিনিটে কী আলোচনা করব, আর বক্তব্য শেষ করব কীভাবে— সাজিয়ে নেওয়া।
৫. বক্তবে জটিল বাক্য ও নেতিবাচক কথা পরিহার করা:
বেশ কিছু বক্তবে অনেক সময় জটিল বাক্য বা নেতিবাচক কিছু শব্দ এসে যায় । তবে সেগুলি যদি আমরা বক্তবে ব্যবহার করি তাহলে শ্রোতারা বির্কতি বোদ করতে পারে । এজন্য দেখা যায় , যাঁরা গুছিয়ে কথা বলে তাঁরা আসলে কম শব্দে খুব বেশি কাজের কথা বলে থাকে । তাই , কথা বলার সময় জটিল বাক্য ব্যবহার না করে সহজ বাক্য ব্যবহার করা । শব্দভান্ডার কিংবা বিদ্যার দৌড় কখনোই কথার মধ্যে প্রকাশের চেষ্টা করা ধকার নেই। যতো সরল ও সাধারণ শব্দ ও বাক্যে কথা বলা যায় । আমাদের সবারই খেয়াল করা উচিত , কথা বলার সময় অন্য কারও নামে নেতিবাচক বাক্য কিংবা শব্দ কোনোভাবে ব্যবহার করছি কি না । নেতিবাচক বাক্য ব্যবহার করলে আসলে সাধারনত নিজের দুর্বলতাই প্রকাশ পায়। আর , যদি সমালোচনা করতেই হয় তাহলে যৌক্তিকভাবে করুন। বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায় ।
৬. সমস্যা নয়, সমাধানের কথা বলুন :
আমরা অনেকেই আছি সমাধানের কথা না বলে সমস্যার কথাই বেশি বলে থাকি। ধরুন, আপনি একজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে লিফটে উঠেছেন। ত্রিশ সেকেন্ডের জন্য তাঁর সঙ্গে নিরিবিলিতে কথা বলার জন্য আপনি একটি সুযোগ পেয়েছেন । এই অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে তাঁর সামনে কোনো ‘আইডিয়া’ উপস্থাপন করবেন? আর ২০-৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কার্যকরভাবে একটা ভাবনা উপস্থাপন করাকে বলা হয় ‘এলিভেটর পিচ’। এসব ক্ষেত্রে সমস্যা নয়, সমাধানের কথা বলা জরুরি । এছাড়াও , আগে থেকেই শ্রোতার আগ্রহের জায়গা সম্পর্কে আগে জেনে নেওয়া এবং সেভাবেই আপনার বক্তব্য তৈরি করা।
৭. অন্যকে অনুসরণ করে , নিজেকে তৈরি করতে শিখুন :
আমরা আমাদের কথা বলার ধরনটি অন্যকে দেখেও পরির্বতন করতে পারি । কারণ, সুন্দর করে কথা বলা একটি শিল্পও বটে । তাই সুন্দর করে কথা বলা শিল্পটি রপ্ত করতে টেড–এর বিভিন্ন ভিডিও যেমন – হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ কিংবা ব্লুমবার্গ বিজনেস ম্যাগাজিনের বিভিন্ন ভিডিও দেখতে পারি । হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লাইভ ভিডিওতে বিভিন্ন শিক্ষনীয় লেকচার দিয়ে থাকেন, সেগুলো দেখে আমরা সেই কথা বলা শিল্পটি রপ্ত করতে পারবো । এছাড়াও , অনলাইনে অনেক সময় বিভিন্ন উপস্থাপক বিভিন্ন বিষয় কথা বলে থাকে , আমরা সেটি দেখেও আমাদের কথা বলার শিল্পটি চর্চা করতে পারি । তবে ,আপনি যদি পেশাজীবনে কারো মতো হতে চান, তাহলে তাকে অনুসরণ করে আপনার কথা বলার শিল্পটি রপ্ত করে ফেলুন ।
৮. সুন্দর করে কথা বলতে হলে , অবশ্যই পড়তে হবে:
আমরা অনেকেই জানি কীভাবে সুন্দর করে কথা বলতে হয় , কিন্তু সেটি আমরা অনেকেই কথা বলতে গেলে পারি না । এর প্রধনা কারণ হচ্ছে যে চর্চা না থাকা । এই চর্চাটি থাকার জন্য আমাদের বেশি করে বই পড়তে হবে । আমরা যদি প্রতিদিন একটা সময় করে বই বা যে কোন খবরের কাগজ পড়ি তাহলে আমাদের কথা বলার ধরন অনেক খানি প্লাটে যাবে । দেখা যায় যে , যাঁরা সুন্দর করে কথা বলে, তাঁরা কিন্তু ব্যক্তিজীবনে অনেক পড়াশোনা করে থাকে । কথা সুন্দর করে বলার জন্য পড়ার বিকল্প নেই । এর জন্য বিষেশ করে আমরা যদি ফিকশন, নন-ফিকশন বা নানা ধরনের বই পড়লে আমাদের নিজেদের মধ্যে নানা বিষয়ে জ্ঞান ও তথ্য জমা হবে, সেজন্য কথা বলার সময় গুছিয়ে বলার শিল্পটি রপ্ত করতে অনেক সহজ হবে। একটি বিষয় আমাদের সবচেয়ে বেশি খেয়াল দরকার যে , যেকোনো মিটিং কিংবা পাবলিক স্পিকিংয়ের ক্ষেত্রে কথা শুরুর আগে শ্রোতা কিংবা যাঁর সঙ্গে কথা বলছি তাঁর বা তাঁদের অনুমতি নিয়ে শুরু করা খুব জরুরি । তাছাড়া , শ্রোতার মনোযোগ ধরে রাখার জন্য সঠিক তথ্য ব্যবহার করে কথা বলা এবং খেয়াল রাখা যে , শ্রোতারা যা জানে, তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কি না । কারণ , পুনরাবৃত্তি করলে শ্রোতারা সেটি বির্তক বোদ করে ।
৯.কথা বলার ধরন প্লাটানোর ক্ষেত্রে চর্চাই সব :
কারণ , হুট করে সুন্দর করে কথা বলার শিল্পটি আয়ত্তে আসে না। আমাদের নিজেদেরকে বদলাতে কমসে কম চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে । আর, এই বিনিয়োগ কিন্তু আমাদের আজীবন কাজে আসবে। শেখার সময় ভুল হবেই, তা-ও চর্চা করে যেতে হবে । বাড়ির বড়দের সাথে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের কাছ থেকে আমরা আমাদের ভুল গুলি সর্ম্পকে জেনে নিতে পারি ।
১০. প্রয়োজন হিসেবে অনলাইনে কিছু কোর্স করা :
বর্তমানে সময়ে সুন্দর করে কথা বলা শিখার জন্য অনলাইনে অনেক ধরনের কোর্স রয়েছে । সেগুলি যদি আমরা একটু সময় নিয়ে করি তাহলে আমাদের কথা বলার ধরন অনেকটা প্লাটে যাবে । যেমন : কোর্সেরা, ইউডেমি, ফিউচার লার্নসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কথা বলাসংক্রান্ত কোর্স করার সুযোগ রয়েছে । আমরা যদি তিন থেকে সাত সপ্তাহের একেকটি কোর্স করে কীভাবে সুন্দর করে কথা বলা যায়, তা শিখে নিতে পারি।
Source: www.prothomalo.com | Written by Md. Afzal Hossain